#অফুরন্ত(পরবর্তী খণ্ড) #সেলিম

 







প্রথম খণ্ড পাঠের জন্য ক্লিক করুন ঃ https://salimworld1.blogspot.com/2024/12/blog-post.html



কিন্তু জীবনের পথ কখনো একরৈখিক হয় না। তুহিনের জীবনে শিল্পার আগমন যেমন বসন্তের উষ্ণতা এনেছিল, তেমনি কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা তার মনের আকাশে মেঘের ছায়া ফেলতে শুরু করল। শিল্পার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত তুহিনের জন্য ছিল এক নতুন জীবনের স্বপ্ন। তারা একসঙ্গে কলেজের লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করত, ক্যাম্পাসের পুরনো গাছের ছায়ায় বসে ভবিষ্যতের কথা বলত। শিল্পার হাসি আর তার সরল কথাবার্তা তুহিনের মনের গভীরে এক অজানা শক্তি জাগিয়ে তুলেছিল। সে প্রথমবারের মতো নিজের উপর ভরসা করতে শিখছিল। পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ল, ক্লাসে সে আগের মতো পিছনের সারিতে লুকিয়ে থাকত না। শিল্পার উৎসাহে সে এমনকি একটি কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল, যেখানে তার কবিতা পড়া সবাইকে মুগ্ধ করেছিল।

কিন্তু সুখের এই ঝলকানি বেশিদিন স্থায়ী হল না। শিল্পার পরিবার হঠাৎ তাদের ব্যবসার কারণে অন্য শহরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। শিল্পা তুহিনকে বলেছিল, “তুমি আমার জন্য যা করেছ, তা আমি কখনো ভুলব না। তুমি আমাকে শিখিয়েছ যে সরলতার মধ্যেও একটা অসাধারণ শক্তি থাকে।” কিন্তু তার কথার মাঝে একটা অসহায়তা ছিল। তারা দুজনেই জানত যে দূরত্ব তাদের সম্পর্কের উপর ভারী ছায়া ফেলবে। শিল্পা চলে গেল, আর তুহিনের জীবনে আবার এক অন্ধকার নেমে এল।

প্রথম কয়েক মাস তুহিন নিজেকে সামলাতে পারেনি। শিল্পার স্মৃতি তাকে তাড়া করত। সে আবার নিজের খোলসে ঢুকে পড়তে চাইল। পড়াশোনা আবার অগোছালো হয়ে গেল। কিন্তু এবার কিছু একটা তার মধ্যে বদলে গিয়েছিল। শিল্পার দেওয়া আত্মবিশ্বাস তার মনের গভীরে জ্বলছিল। একদিন সে তার পুরনো ডায়েরিটা খুলল, যেখানে সে শিল্পার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো লিখে রেখেছিল। সেখানে একটা লাইন তার চোখে পড়ল: “তুমি যদি নিজেকে বিশ্বাস কর, তাহলে পৃথিবীও তোমাকে বিশ্বাস করবে।” এই কথাটা শিল্পা তাকে বলেছিল।

তুহিন সিদ্ধান্ত নিল যে সে হাল ছাড়বে না। শিল্পা তার জীবনে এসেছিল একটা আলো জ্বালাতে, আর সেই আলোকে সে নিভতে দেবে না। সে আবার পড়াশোনায় মন দিল। এবার সে শুধু নিজের জন্য নয়, শিল্পার সেই বিশ্বাসের জন্যও লড়তে চাইল। সে একটি স্থানীয় লাইব্রেরিতে যোগ দিল, যেখানে সে নিয়মিত পড়াশোনা করত এবং অন্যদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিত। ধীরে ধীরে তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে এলো। সে কলেজের শেষ পরীক্ষায় ভালো ফল করল এবং একটি ছোট চাকরিতে যোগ দিল।

কয়েক বছর পর, এক সন্ধ্যায় তুহিন একটি স্থানীয় কবিতার আসরে অংশ নিচ্ছিল। তার কবিতা পড়া শেষ হলে হঠাৎ একটি পরিচিত মুখ তার দিকে এগিয়ে এল। শিল্পা। সে ফিরে এসেছিল তার পরিবারের সঙ্গে। তারা দুজন কিছুক্ষণ কথা বলল। শিল্পা তুহিনের পরিবর্তন দেখে অবাক হল। সে বলল, “তুমি সেই তুহিন নও, যাকে আমি চিনতাম। তুমি এখন অনেক বড় কিছু।” তুহিন হাসল। সে জানত যে শিল্পা তার জীবনে একটা অধ্যায় ছিল, কিন্তু তার গল্প এখানেই শেষ নয়।

তুহিনের জীবন এখনো চলছে। হয়তো তার পথে আরো ঘাত-প্রতিঘাত আসবে, কিন্তু সে শিখেছে যে নিজের মনের আলোকে ধরে রাখতে পারলে অন্ধকারও একদিন দূর হয়। তার জীবনের গোধূলি আর দূরে নেই, তবে সেটা এখন আর শুধু ক্ষণিকের নয়—একটা নতুন সূর্যোদয়ের প্রতিশ্রুতি।

Comments

@Salim said…
https://salimworld1.blogspot.com/2024/12/blog-post.html
To read the Part 1 click on the above link

Popular posts from this blog

অভিযোগ

#অফুরন্ত @সেলিম

#Culturedmodernsociety