ছোটগল্প#মুখোশ #সেলিম

 






  মুখোশ (The Mask)
 

কলকাতার এক পুরনো গলির মধ্যে, ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে এক যুবক—অয়ন। তার চোখে চশমা, মুখে হালকা দাড়ি, এবং সবসময় পরনে একটা কালো কোট। কিন্তু তার সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার—সে মানুষের চেহারা দেখে চিনতে পারে না। মানে, সে ঠিকভাবে মুখ মনে রাখতে পারে না।

এই রোগটার নাম ‘ফেস ব্লাইন্ডনেস’ বা Prosopagnosia। কিন্তু অয়নের কাহিনি শুধু রোগের নয়, এটা আত্মপরিচয়ের।

অয়ন ছিল একজন শিল্পী। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি তার ছিল এক অদ্ভুত টান। মুখ আঁকতে পারত না, কিন্তু অনুভূতি আঁকত—চোখের বিষাদ, ঠোঁটের কাঁপুনি, চিবুকের ব্যথা। অয়নের প্রতিটি ছবি ছিল যেন একটি আত্মা।

একদিন, একটি মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়—নাম রিমা। রিমা ছিল স্পষ্টভাষী। অয়নকে দেখে সে বলেছিল, "তুমি মুখ না চিনলেও, মনের চেহারা কি আঁকতে পারো?"

এই এক প্রশ্ন অয়নের ভিতর কিছু জাগিয়ে তোলে।

দু’জনে বন্ধুত্ব করে। রিমা প্রায়শই আসে অয়নের স্টুডিওতে, কথা বলে, গল্প করে, গান গায়। অয়ন তার ছবি আঁকে—কিন্তু মুখ নয়, রিমার কণ্ঠ, রিমার অনুভব, রিমার ‘চরিত্র’। একদিন রিমা বলে, “অয়ন, তুমি হয়তো আমায় চিনবে না ভিড়ের মাঝে, কিন্তু আমি চিরকাল থাকব তোমার ক্যানভাসে।”

তারপর হঠাৎ করেই রিমা আর আসে না। ফোন বন্ধ, ঠিকানাও ফাঁকা। অয়ন খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু সে তো রিমার মুখও ঠিকমতো মনে রাখতে পারে না।

বছরখানেক পর একদিন এক গ্যালারিতে অয়নের প্রদর্শনী হয়। ছবি দেখে এক মহিলা থেমে দাঁড়ান। তার চোখে জল।

"এই ছবিটা আমি চিনি," সে বলেন।

অয়ন কাঁপা গলায় বলে, “কে আপনি?”

মহিলা উত্তর দেয়, “আমি রিমার দিদি। সে মারা গেছে এক বছর আগে, ব্রেইন টিউমারে। মৃত্যুর আগে তোমার কথাই বলত সবসময়।”

অয়ন স্তব্ধ হয়ে যায়। তারপর মৃদুস্বরে বলে, “আমি কখনও তার মুখ চিনিনি… কিন্তু তার চরিত্র, তার হৃদয়… আমি কখনও ভুলতে পারব না।”

Comments

Popular posts from this blog

অভিযোগ

#অফুরন্ত @সেলিম

#Culturedmodernsociety