Posts

#ছোটগল্প#ছায়া#সেলিম

Image
    ছায়া ছোট শহরের এক প্রান্তে ছায়াঘেরা গাছপালা দিয়ে ঘেরা একটি আবাসিক স্কুল – নবদিগন্ত বিদ্যানিকেতন । বিশাল বিল্ডিং সাথে স্কুলের পরিবেশ ছিল শান্ত, পরিচ্ছন্ন আর শিক্ষাবান্ধব। শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়ানোয় নিষ্ঠাবান, আর ছাত্ররাও সাধারণত ভদ্র ও পড়ুয়াভাবে পরিচিত। এই স্কুলেরই দশম শ্রেণির ছাত্র আরমান । বইয়ের পাতায় ছিল তার গভীর মনোযোগ, কিন্তু জীবনের পাতায় সে ছিল একটু চুপচাপ, একটু একাকী। পড়াশোনায় বরাবরই ভালো, নম্র, কিন্তু মিশুক বলা যাবে না। কারণ হয়তো তার পারিবারিক বাস্তবতা — মা-বাবা দুজনেই বিদেশে থাকতেন বহু বছর ধরে।  আরমান  বড় হয়েছে দাদু-ঠাম্মার কাছে, আর তারপর থেকে সে থাকছে এই স্কুলের হোস্টেলে। হোস্টেল জীবনে অনেকেই মিশে গেলেও, অরমান যেন মিশতেই পারে না ঠিকভাবে। ছেলেরা ক্রিকেট খেলে, হোস্টেলের টিভি রুমে গলা ছেড়ে গান গায়, রাতে দেরি করে গল্প করে, কিন্তু অরমান থাকে তার বই আর ডায়েরির দুনিয়ায়। মন খুলে বলার কেউ নেই। অথচ মনের ভেতরে জমা হয় শত শত কথা। ঠিক তখনই, হঠাৎ যেন আলোর রেখার মতো এলেন অনিরুদ্ধ স্যার — সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ইংরেজি শিক্ষক । বয়সে তরুণ, চেহারায় আত্মবিশ্বাস, কথায় এক আশ্চর্...

ছোটগল্প#মুখোশ #সেলিম

Image
    মুখোশ (The Mask)   কলকাতার এক পুরনো গলির মধ্যে, ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে এক যুবক—অয়ন। তার চোখে চশমা, মুখে হালকা দাড়ি, এবং সবসময় পরনে একটা কালো কোট। কিন্তু তার সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার—সে মানুষের চেহারা দেখে চিনতে পারে না। মানে, সে ঠিকভাবে মুখ মনে রাখতে পারে না। এই রোগটার নাম ‘ফেস ব্লাইন্ডনেস’ বা Prosopagnosia । কিন্তু অয়নের কাহিনি শুধু রোগের নয়, এটা আত্মপরিচয়ের। অয়ন ছিল একজন শিল্পী। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি তার ছিল এক অদ্ভুত টান। মুখ আঁকতে পারত না, কিন্তু অনুভূতি আঁকত—চোখের বিষাদ, ঠোঁটের কাঁপুনি, চিবুকের ব্যথা। অয়নের প্রতিটি ছবি ছিল যেন একটি আত্মা। একদিন, একটি মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়—নাম রিমা । রিমা ছিল স্পষ্টভাষী। অয়নকে দেখে সে বলেছিল, "তুমি মুখ না চিনলেও, মনের চেহারা কি আঁকতে পারো?" এই এক প্রশ্ন অয়নের ভিতর কিছু জাগিয়ে তোলে। দু’জনে বন্ধুত্ব করে। রিমা প্রায়শই আসে অয়নের স্টুডিওতে, কথা বলে, গল্প করে, গান গায়। অয়ন তার ছবি আঁকে—কিন্তু মুখ নয়, রিমার কণ্ঠ, রিমার অনুভব, রিমার ‘চরিত্র’। একদিন রিমা বলে, “অয়ন, তুমি হয়তো আমায় চিনবে না ভিড়ের মাঝে, কিন্তু আমি চিরকাল থ...

ছোটগল্প #শেষট্রেন #সেলিম

Image
  শেষ ট্রেন সন্ধ্যে ছ'টা। হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নম্বর পাঁচে দাঁড়িয়ে ছিল অজয়। ট্রেন ছাড়তে তখনও কিছুটা সময় বাকি। কিন্তু তার বুকের ভিতর যেন তোলপাড় চলছিল। হাতে একটা পুরনো খাম — যার উপর লেখা ছিল ‘রাজনি’। চার বছর পর আজ অজয় আবার রাজনিকে দেখতে এসেছে। শেষ দেখা হয়েছিল সেই কলেজের দিনগুলোয়, যখন তারা দুজনেই ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনছিল একসঙ্গে। কিন্তু সময়, সমাজ আর ভুল বোঝাবুঝির জালে হারিয়ে গিয়েছিল সব। সেদিন রাজনির বাবা স্পষ্ট বলেছিলেন, "এই ছেলেটা তোমার জন্য নয়। ওর কোনো ভবিষ্যৎ নেই।" রাজনি মুখে কিছু বলেনি, শুধু একটা চিঠিটা দিয়েছিল — "অজয়, যদি ভালোবাসো, আমাকে ভুলে যাও। আমি চাই না তুমি আমার জন্য ভেঙে পরো।" অজয় ভেঙে পরেনি, কিন্তু প্রতিটি দিন সে ভেবেছে — রাজনি কি একটিবারও ওকে মনে করে? আজ হঠাৎ ফোনে রাজনির মেসেজ — “আমি কাল কানাডা চলে যাচ্ছি। যদি একবার দেখা করতে চাও, সন্ধ্যে ছ’টায় হাওড়ায় থাকবো।” অজয় সেই অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছালো ছ’টা কুড়ি। আর রাজনির কোনো খোঁজ নেই। অজয়ের চোখে জল চলে এলো। হঠাৎই কারও গলা — "অজয়…" সে ঘুরে দেখল — রাজনি। তবে আগের সেই হ...

#অফুরন্ত(পরবর্তী খণ্ড) #সেলিম

Image
  প্রথম খণ্ড পাঠের জন্য ক্লিক করুন ঃ https://salimworld1.blogspot.com/2024/12/blog-post.html কিন্তু জীবনের পথ কখনো একরৈখিক হয় না। তুহিনের জীবনে শিল্পার আগমন যেমন বসন্তের উষ্ণতা এনেছিল, তেমনি কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা তার মনের আকাশে মেঘের ছায়া ফেলতে শুরু করল। শিল্পার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত তুহিনের জন্য ছিল এক নতুন জীবনের স্বপ্ন। তারা একসঙ্গে কলেজের লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করত, ক্যাম্পাসের পুরনো গাছের ছায়ায় বসে ভবিষ্যতের কথা বলত। শিল্পার হাসি আর তার সরল কথাবার্তা তুহিনের মনের গভীরে এক অজানা শক্তি জাগিয়ে তুলেছিল। সে প্রথমবারের মতো নিজের উপর ভরসা করতে শিখছিল। পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ল, ক্লাসে সে আগের মতো পিছনের সারিতে লুকিয়ে থাকত না। শিল্পার উৎসাহে সে এমনকি একটি কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল, যেখানে তার কবিতা পড়া সবাইকে মুগ্ধ করেছিল। কিন্তু সুখের এই ঝলকানি বেশিদিন স্থায়ী হল না। শিল্পার পরিবার হঠাৎ তাদের ব্যবসার কারণে অন্য শহরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। শিল্পা তুহিনকে বলেছিল, “তুমি আমার জন্য যা করেছ, তা আমি কখনো ভুলব না। তুমি আমাকে শিখিয়েছ যে সরলতার মধ্যেও এক...

#Englishpoem#Salim#TheLightofLearning

Image
      The Light of Learning   Education is a shining light,   A beacon burning strong and bright.   It breaks the chains of doubt and night,   And lifts our minds to soaring height.     A book, a thought, a curious mind,   Can worlds of wonder help us find.   It shapes the young, the old, the blind,   And leaves ignorance far behind.     The pen is mightier than sword,   For knowledge is its own reward.   It builds the bridges, heals the scarred,   And turns the dreamer to a bard.     So let us learn, and let us grow,   For wisdom helps the spirit glow.   Through every page, through all we know,   We plant the seeds for minds to grow.

#অফুরন্ত @সেলিম

Image
 জীবনের চলার পথে বহু ঘাত পতিঘাতের সম্মুখিন হলেও, আপন্নতের উপভোগ এক অনন্নতা সৃষ্টি করে।  কোন কিছুকে একান্ত আপন করে পাওয়ার আনন্দ তেমনি অনন্নতার রুপক। এক নিরবিছিন্ন জীবনের সুখের প্রলেপ  এতটাই ক্ষীণ যে অল্পতেই ঘনীভূত হয়ে নিজ অস্তিতের লয় করে।       আজকের ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু তুহিন ,  ক্লাসের সব থেকে নড়বড়ে ছেলে। সবার পিছনে দাঁড়িয়ে সবার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলানো ওর গুণ ছিল। নিজের মত দেওয়ার চেষ্টা করার কথা ভাবনাতে আসলেও প্রকাশ করার ক্ষমতা ছিল না; কারণ তাঁকে সবার সামনে অপদস্ত হতে হয়েছিল আগেরবার। তাই আর সাহস করে বলে উঠতে পারেনি।  নিজের মনের কথা গুল চেপে রেখে দিত, ভয় ছিল যদি কারোকে বলি আর সেটা নিয়ে  কেউ উপহাস করে বসে, তাই নিজের মধ্যে বাঁচতে শুরু করেছিল। এই ভাবেই কেটে গেল কতগুলো বছর। চুপ করে থাকাটা এক সময় অভ্যাসে পরিণত হল।  দিন দিন সে উপলব্ধি করতে থাকে যে তার উপস্থিত গুণ আর অর্জিত জ্ঞান কোন কাজের উপযোগী না। হয়তো তার জীবনের পরন্ত গোধূলির উপস্থিতি ক্ষণিক দূরে বাস করছে। পড়াশুনাটাও ততোটা ভাল চলছিলো না। পড়াশুনা থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও ক্ষমতা ...

অভিযোগ

Image
  এ অভিযোগ শেষ হওয়ার না -- কেন জানো? তুমি আমার একমাত্র পছন্দ হওয়া সত্বেও আমি বোধ হয় তোমার পছন্দের নিরিখের বিবেচনাধীন ব্যক্তিবর্গের অধীন ছিলাম । হ্যাঁ, আজ তুমি হয়তো বেশ খুশি। কিন্তু , আমার অবস্থানের পরিবর্তন যে হয়নি এটা বলা অন্যায় হবে! প্রত্যহ সকালে যখন বিছানার পাশের জানালা দিয়ে দেখি, সূর্যের উজ্জ্বল রশ্মি নতুন দিনের সূচনা করছে, ঠিক তখনই নীল আকাশের নিচে এক নতুন পথের সূচনাও করে, যা আমার প্রহসনময় জীবনে আশার আলো দেখায়। কিন্তু পুরনো কিছু স্মৃতি উর্বর ভাবনায় আগুন জ্বালিয়ে মোর ব্যক্তিসত্তাকে ধীরে ধীরে নিজের কাছে উপহাসময় করে তুলেছে। তবে আজ উপহাসময় ব্যক্তিত্বহীন সেই আমি, সীমাহীন সমুদ্রে একাকীত্বের সঙ্গী হয়ে নিজেকে চিনতে শিখছি। হ্যাঁ, এ অনন্য এক পাওয়া।।              সিদ্ধান্ত না হয় তুমিই নিও। আমি না হয় কলমের মোড়কে আঁকড়ে ধরে অন্ধকার একাকীত্বের সঙ্গী হয়ে গেলাম। দু - প্রহরের অবসান কিন্তু গোধূলির আগমনের বার্তা নিয়ে আসে। তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিয়ে পরন্ত গোধূলির আগমনের অপেক্ষায় পথ চেয়ে রইলাম।।। কলমে: সেলিম